- শিগগির ডাক, আমার ব্যাগ দেখতে হবে না। আমি ঠিক ঠিক গুছিয়ে নিয়েছি।
বড়মা চেঁচিয়ে উঠল,
- ছোট আয় চলে আয়, আগে খেয়ে নিই, তারপর না হয় ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিস।
একসঙ্গে তিনজন খেতে বসলাম। বড়মা আজ দারুণ দারুণ সব পদ রান্না করেছে। চিংড়ি
মাছের মালাইকারি, ট্যাংরা মাছের ঝোল, ভাপা ইলিশ। নিঃশব্দে তিনজন
খাচ্ছিলাম, আমি একটা ট্যাংরা মাছ বড়মার পাতে তুলে দিলাম। বড়মা হেই হেই করে উঠল। আর একটা
ইলিশ মাছ ছোটমার পাতে তুলে দিলাম। ছোটমা কপট গম্ভীর হয়ে বলল,
- মুকুল এটা কি হল? সারাটা দুপুর ধরে আমরা দু’বোনে তোর
জন্য রান্না করলাম, আর তুই যদি......।
- আমার যতটা খাওয়ার আমি ঠিক
নিয়ে নিয়েছি, বারতিটা তোমাদের দিলাম।
বড়মা খেতে খেতেই বলল,
- হ্যাঁরে মুকুল, দুপুরে কি হয়েছিল? তুই নাকি তোর বোসের সঙ্গে রাগারাগি করেছিস?
- তোমাকে এ কথা আবার কে বলল?
- ভৌমিক বলল।
- ও।
আমি ছোটমার মুখের দিকে একবার তাকালাম। ছোটমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকটা
বন্ধুর মত কিন্তু বড়মাকে আমি শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। তাই বড়মার কোন
কথায় আমি চট করে না করতে পারি না। অনেক ভেবে চিন্তে আমায় উত্তর দিতে হয়।
- তুমি বড়মাকে বলেছ নাকি?
- কি?
- যা তোমাকে একদিন গল্পের
ছলে বলেছিলাম।
- ও, শতাব্দীর ব্যাপারটা?
- হ্যাঁ, আজ ঐ ব্যাপারটা নিয়েই একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে।
খেতে খেতে মাথা নীচু করেই কথা বলছিলাম। কিছুক্ষণ সবাই নিঃশব্দ। খালি খাবার
হাপুস হুপুস শব্দ।
- তা হ্যাঁরে, তুই জানিস না ও তোদের মালকিন?
- জানতাম না, আজ জানলাম। কয়েক দিন আগে ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বেঙ্গল ক্লাবে। বড়ো
সাহেব পাঠিয়েছিল একটা এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে। ওখানে গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা হল। ও ওর
হাসবেন্ডের সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিল। তারপর জোর করে ওর বাড়িতে টেনে নিয়ে গেল।
অনেক রাত পর্যন্ত ওর বাড়িতে ছিলাম। সেদিন তোমার এখানে আসার কথা ছিল, আসা হয় নি। কেন ছোটমাকে আমি তো সব বলেছিলাম।
- হ্যাঁ ছোট বলেছিল, বয়স হয়েছে এখন আর খেয়াল থাকে না।
- আরে হল ৭.৩০ টায় ট্রেন, এতটা পথ যেতে হবে তো।
রঞ্জিতদার গলায় অভিযোগের সুর।
- নিজেরা তো চব্বচষ্য গিলেছ।
আমাদের কি একটু শান্তিতে খেতেও দেবে না? কি হিংসুটে ব্যাটাছেলেরে
বাবা।
সবাই হো হো করে হেসে উঠল। ভৌমিকদা আমার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ মারল।
- নে নে তোর কাগজপত্র সব
বুঝে নে, আমায় আবার অফিসে যেতে হবে।
আমি আমার ট্রেনের টিকিট, হোটেলের বুকিংয়ের কাগজপত্র, অফিসিয়াল
কিছু কাগজপত্র সব বুঝে নিলাম। সবাইকে একে একে প্রণাম করলাম। বড়মার চোখ ছলছলে, আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বলল,
- সঙ্গে রাখ, জানি তোর কাছে আছে, লাগলে খরচ করিস, না লাগলে এসে ফেরৎ দিস।
আমি হাসলাম, আজ পর্যন্ত বড়মা আমার কাছে থেকে কিছু ফেরৎ নেন নি, খালি দিয়ে গেছেন। আমি মুখের দিকে তাকালাম, চোখ দুটি ছল ছল করছে। বেরিয়ে এলাম, অফিসের গাড়ি রেডি আছে।
রঞ্জিতদা বলল,
- শোন, আমাদের এক কোরেসপন্ডেন্স আছে ওখানে বালিচরণ নাম। ও কাল তোর সঙ্গে যোগাযোগ করে
নেবে। তবে আজ তোর জন্য ওখানে আমাদের অফিসের গাড়ি থাকবে। অফিসিয়াল ফাইলের ওপরে যে
চিঠিটা আছে দেখবি ওতে গাড়ির নম্বর লেখা আছে। তাছাড়া আমি ওখানকার অফিসে বলে
দিয়েছি, তোর কোচ নং, টিকিটের নম্বর দিয়ে দিয়েছি।
তার মানে মদ্দা কথা হল আমার যাতে কোন
অসুবিধা না হয় তার জন্য সমস্ত বন্দোবস্তই পাকাপাকি ভাবেই তৈরি করা হয়ে গেছে।
স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন ছাড়তে আর দশ মিনিট বাকি। আমার টিকিট এসি টু টায়ার।
টিকিটের সঙ্গে কোচ মিলিয়ে নিয়ে ট্রেনে উঠলাম। দেখলাম আমার জন্য একটি কুপ বুক করা
হয়েছে। মাত্র দুটি সিট, সেখানে আর একজন যাত্রী কে
দেখতে পেলাম না। যাই হোক আমার একটা মাত্র ব্যাগ, সিটের তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে একটু বাইরে বেরিয়ে এলাম। বহু মানুষের দৌঁড়াদৌড়ি, চেঁচামেচি। গাড়ির ড্রাইভার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
- মুকুলদা, আমি এবার যাই?
- হ্যাঁ যা, গিয়ে একবার বলে দিস আমি ঠিক ট্রেনেই উঠেছি।
ছেলেটি হেসে ফেলল। আমি ভেতরে চলে এলাম। ট্রেনটা একটু দুলে উঠেই চলতে শুরু করল।
আমি আমার জায়গায় এসে বসলাম। কুপের দরজাটা খোলাই রেখেছি। একটু পরই টিটি আসবে।
রাত্রিবেলা, অতএব ঠেসে ঘুম। খাওয়া দাওয়া বেশ ভালই হয়েছে। তবে এক কাপ গরম কফি পেলে বেশ
ভাল হত। কপাল ভাল থাকলে হয়ত এরা দেবে, না হলে নয়। কুপের
এ্যারেঞ্জমেন্টটা খুব ভাল, দুদিকে
দুটি সীট, মাঝখানে একটা সেন্টার টেবিলের মত। জানলার ধারে মাথার শিয়রে একটা টেবিল
ল্যাম্পের মত, জেলে দেখলাম বেশ ভাল। যাক, ঘুম না আসা পর্যন্ত একটা
বই পড়া যাবে। কালকূট সমগ্রের একটা খন্ড নিয়ে এসেছি। ছটা উপন্যাস আছে। ট্রেনটা কত
জোরে যাচ্ছে কিভাবে যাচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। এই কামড়ারই কয়েকজনের
চেঁচামিচির শব্দ কানে আসছে, তারা এখনও গুছিয়ে উঠতে পারে নি। ফোনটা বেজে উঠল, দেখলাম বড়মার নম্বর। সমস্ত ব্যাপার পঙ্খানুপুঙ্খ রূপে জানিয়ে দিলাম। শেষে বড়মা
বলল,
- সাবধানে থাকিস।
নীচু হয়ে সিটের তলা থেকে ব্যাগটা টেনে বের করলাম। পাম্পার বালিশটা বের করে ফুলিয়ে নিলাম।
উপন্যাস সমগ্রটা বের করে কুপের দরজাটা টেনে দিয়ে, টান টান হয়ে শুয়ে পড়লাম, আঃ কি আরাম। আবার ফোনটা
বেজে উঠল, দেখলাম তানিয়ার নম্বর,
- হাঃ হাঃ কি হল বাবাজীবন, ট্রেন ছেড়েছে?
- হ্যাঁ।
- এখন কোথায়?
- জানি না ট্রেন চলছে, এটুকু বলতে পারি।
- কেন?
- আরে আমার টিকিট টু টায়ার
এসি কোচের একটা কুপে পড়েছে। সেখানে দুটো সিট আছে কিন্তু আমি একা।
- ইস! ব্যাডলাক, আমি যাব নাকি?
- চলে এসো।
- ইস, সখ দেখ।
- তুমি এখন কোথায়?
- বাড়ি ফিরছি। বড়ো সাহেবের
আজ মাথাটা বেশ গরম।
- কেন, আবার কি হল?
- অফিসে একটা ঝামেলা হয়েছে।
- কাকে নিয়ে?
- আবার কাকে নিয়ে, ঐ চিফ রিপোর্টার।
- তোমার এ্যাসাইনমেন্ট জমা
দিয়েছ?
- হুঁ, মুকুল ভাল লাগছে না, তোমার কথা বার বার মনে পড়ছে।
- আজকের দুপুরটা তুমি ভাল এঞ্জয় করেছ।
- কেন, তুমি কর নি?
- কই করলাম? সবই তো তুমি শুষে নিলে, আমি পেলাম কোথায়? ঐ ছিটে ফোঁটায় কিছু হয় নাকি?
- এই জান, তোমার ওখান থেকে বেরিয়ে অফিসে এসে দেখি হয়ে গেছে।
- তাই?
- হ্যাঁ, কি বিশ্রী অবস্থা বল তো, ম্যানেজ করে নিয়েছি।
- স্বপ্না?
- কি?
- আবার কবে করব?
- ফিরে এসো।
- এলেই হবে?
- এখন কি করব?
- কি আর করা যাবে, দুধের সাধ ঘোলে মেটাও।
কুপের দরজাটা কেউ নক করল। শুয়ে শুয়েই বললাম,
- খোলা আছে, ভেতরে আসুন।
দেখলাম টিটি সাহেব এসেছেন, উঠে বসলাম। ওনাকে ভেতরে
এসে বসতে বললাম, উনি ভেতরে এলেন। আমি ব্যাগ থেকে টিকিটটা বের করে ওনাকে দিলাম। উনি দেখে বললেন,
- স্যার আপনার কোন অসুবিধা
হলে, আমাকে বলবেন।
আমি একটু অবাক হলাম, আমাকে স্যার বলে সম্বোধন
করাতে। আমি বললাম,
- একটু কফি পাওয়া যাবে?
- অবশ্যই, আমি গিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর ঐ যে বললাম এনি প্রবলেম আমাকে একটু জানাবেন। আমি
পাশেই আছি।
- ঠিক আছে।
উনি চলে গেলেন। একটু পরেই দেখলাম একজন এসে একটা ট্রে টেবিলের ওপরে রাখল। কফির
পট কাপ ডিস দেখে আমার একটু সন্দেহ হল। আমি নিশ্চয় কোন সাধারণ ব্যক্তি নই। এদের এ্যারেঞ্জমেন্ট সেই কথাই বলছে।
একজন সাধারণ সাংবাদিকের জন্য এরকম ব্যবস্থা? কেমন যেন সন্দেহ হল। মুখে কিছু বললাম না। পকেট থেকে মানি পার্সটা বের করে পয়সা দিতে গেলাম, বলল,
- না স্যার, আপনার যখনই যা চাই বলবেন, আমরা চলে আসব।
একটা বেল দেখিয়ে বলল,
- এই বেলটা একটু বাজাবেন।
আমার সন্দেহটা আরও বাড়ল। এই
ঘরটায় আমাকে বোবা হয়েই থাকতে হবে, কারও সঙ্গে কথা বলার জো নেই। কফি খাওয়ার পর বইটা পড়তে পড়তে কখন
যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। হঠাৎ দরজায় টোকা মারার শব্দে
ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখলাম, টিটি ভদ্রলোক মুখটা আমসি
করে দাঁড়িয়ে আছে।
- স্যরি স্যার, ডিস্টার্ব করলাম। যদি একটু পারমিসন দেন তাহলে একটা কথা বলব।
আমি একটু অবাক হলাম,
- বলুন।
- স্যার আপনার এই কুপে একটা
সিট খালি আছে, একজন ভদ্রমহিলাকে যদি একটু লিফ্ট দেন…।
- আমি লিফ্ট দেবার কে? ফাঁকা আছে, আপনি এ্যালট করবেন।
- না স্যার, এই কুপটা আজ শুধু আপনার জন্য, জি.এম. সাহেবের হুকুম।
হ্যাঁ স্যার, এবং আপনার যাতে কোন অসুবিধা না হয়, তার জন্যও আমাদের নির্দেশ
দেওয়া আছে।
- তাই নাকি? জি.এম. মানে সোমনাথ মুখার্জী?
- হ্যাঁ স্যার।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম।
- ঠিক আছে
আপনি যান, ওনাকে নিয়ে আসুন।
চোখের নিমেষে ভদ্রলোক অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর বছর কুড়ির একজন তরুনীকে
নিয়ে এসে হাজির। দেখেই আমার চোখ স্থির হয়ে গেল। গায়ের রং পাকা গমের মত। পান
পাতার মত লম্বাটে মুখ ঠোঁটের ঠিক ওপরে একটা বাদামী রং-এর তিল। পিঠময় মেঘের মত ঘন
কালো চুল, মাঝে কিছুটা হাইলাইট করা। চোখে রিমলেস চশমা। উদ্ধত বুক। পড়নে থ্রিকোর্টার জিনসের প্যান্ট এবং টাইট একটা হাতাকাটা গেঞ্জি।
টিটি ভদ্রলোক আমার পরিচয় ওকে দিতেই আমি হাত তুললাম।
- আমি ঝর্ণাকে আপনার সব কথা
বলেছি। তাছাড়া সোমনাথবাবুও ওকে সব বলেছে। ঝর্ণার বাবা আমাদের ডিভিসনের এ.জি.এম.।
উনিও আপনাকে খুব ভাল করে চেনেন, আপনার লেখার খুব ভক্ত।
মোবাইলটা বেজে উঠল। পকেট থেকে বের করতেই
দেখলাম, বড়ো সাহেবের ফোন।
- তুই এখন কোথায়?
- কি করে বলব? একটা কুপের মধ্যে টিকিট কেটেছ, আমি এতটা ভি.আই.পি. হয়ে
গেছি নাকি?
- সারা রাতের জার্নি, তোর মা বলল.....।
- ও। আমরা এখন কোথায় আছি?
টিটি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস
করলাম।
- খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
- শোন, আমরা এখন খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
- ও, শোন, সোমনাথ ফোন করেছিল। ওদের
এক কলিগের মেয়ে কি পরীক্ষা আছে, তোর স্টেশনেই নামবে। আমাকে
রিকোয়েস্ট করেছিল। তোর কুপে পারলে একটু ব্যবস্থা করে দিস। আর তোর বড়মাকে বলার
দরকার নেই।
হাসলাম।
- ওরা আমার সামনেই দাঁড়িয়ে
আছে।
- আচ্ছা আচ্ছা, দু একটা ভাল লেখা কাল পরশুর মধ্যে পাঠাস।
- ঠিক আছে।
আমার কথাবার্তা শুনে ওরা বুঝে গেছে আমি কার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলছিলাম। টিটি
ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম,
- কটা বাজে?
- দশটা পনেরো।
- একটু কিছু খাওয়াতে পারেন? আমার গেস্ট এলেন।
- ওকে স্যার, গেস্ট বলবেন না। ঠিক আছে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
- আর একটু কফি।
- আচ্ছা স্যার।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝর্ণার সঙ্গে ভাল আলাপ জমিয়ে ফেললাম। জানলাম ও আমার ওপর
ভাল হোমওয়ার্ক করেই এখানে এসেছে। ও উঠেছে, হাওড়া থেকেই
কিন্তু জায়গা না পাবার জন্য পেনটিকারেই ছিল। তারপর খোঁজ খবর নিয়ে যোগাযোগ করে
এমনকি রঞ্জিতদার পারমিসন নিয়ে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। আমার প্রতি কৃতজ্ঞতায়
ওর দুচোখ ভরে গেছে।
- আমি আসাতে আপনার কোন
অসুবিধা হবে না তো?
- হলে, আপনাকে আসতে দিতাম না।
ঝর্ণা ভাইজ্যাকে একটা সফটওয়ার কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে। পরশুদিন ওর
ইন্টারভিউ। কথায় কথায় এও জানলাম ওখানে ওর থাকার কোন বন্দোবস্ত নেই। ওর বাবা ভাইজ্যাকের স্টেশন মাস্টারকে বলে
দিয়েছেন ওরাই ওর ব্যবস্থা করে দেবে। খাবার চলে এল। আমরা দুজনে একসঙ্গে খেলাম।
খেতে খেতে ওর সঙ্গে অনেক গল্প হল। ওর পড়াশুনার বিষয়, আমার লেখার বিষয়ে, আরও কত গল্প।
আমার কিন্তু বার বার ওর বুকের দিকে নজর চলে যাচ্ছিল। ও সেটা ভাল রকম বুঝতে পারছিল, কিন্তু তার কোন প্রকাশ ওর মুখে চোখে দেখতে পেলাম না। বরং আমার চোখের এই
লোভাতুর দৃষ্টি ও বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিল। খাওয়া শেষ হতেই একজন এসে সব
পরিষ্কার করে নিয়ে চলে গেল। আমি ব্যাগ থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে বাথরূমে চলে গেলাম। একেবারে ফ্রেস হয়ে চলে এলাম। আমি চলে আসার পর
ঝর্ণা গেল। ঝর্ণা একটা ঢলঢলে গেঞ্জি আর একটা ঢলঢলে বারমুডা পরে এল। ঝর্ণাকে দেখে
স্বপ্নার কথা মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আমার সোনামনি নেচে উঠল।
কি আর করা যাবে, আজ রাতটা হাতের কাছে সব
কিছু পেয়েও শুকনো যাবে। মোবাইল থেকে দুটো ম্যাসেজ করলাম, একটা বড়মাকে আর একটা স্বপ্নাকে। মোবাইলের শুইচ অফ করলাম। ঝর্ণা বলল,
- কি হল, শুয়ে পড়বেন নাকি?
- হ্যাঁ।
- তার মানে? আমি একা একা জেগে বসে থাকব নাকি?
- তাহলে কি করব?
- কেন, গল্প করব।
- সব গল্প তো শেষ হয়ে গেল।
- বা রে কই হল?
- ঐ হল আর কি।
আমি টান টান হয়ে শুয়ে পড়লাম। ঝর্ণা
আমার মুখের দিকে কপট রাগ করে তাকাল। আমি বললাম,
- দেখ ঝর্ণা, তুমি না থাকলেও আমি ঘুমোতাম, রাত জাগা আমার অভ্যেস নেই।
- আপনি না সাংবাদিক।
- হ্যাঁ, তাতে কি হয়েছে, সারা রাত জেগে কি আমরা সংবাদ লিখি নাকি? কারা লেখে জানি
না তবে আমি লিখি না।
ঝর্ণার মুখের দিকে তাকালাম, ও চোখ থেকে চশমাটা খুলে
সামনের টেবিলের ওপর রাখল। তানপুরার মত ভরাট পাছা। স্বপ্নার থেকে যথেষ্ট সেক্সী দেখলেই
বোঝা যায়। অন্য কেউ হলে এর মধ্যে ঝর্ণাকে পটিয়ে নিয়ে এককাট মেরে দিত কিন্তু আমার দ্বারা এ সব হয় না। কেউ উপযাজক হয়ে দিলে আমি তা গ্রহণ করি মাত্র। আমি চুপচাপ ঘুমের ভান করে
মরার মত পড়ে রইলাম। ঝর্ণা একবার দরজা খুলে বাইরে গেল। টিটি
ভদ্রলোক সামনেই বসে ছিলেন, তাকে কি যেন বলল, তারপর ভেতরে এসে দরজা লক করে দিল। নিজের ব্যাগ খুলে একটা চ্যাপ্টা কি যেন বের করল। বুঝলাম, ল্যাপটপ। তারপর আমার দিকে পা করে দরজার দিকে মাথা করে ওর বার্থে শুয়ে
ল্যাপটপটা খুলল। আমি মিটিমিটি চোখে ঝর্ণার শুয়ে থাকার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওঃ কি
ভরাট পাছা। যদি একবার মারতে পারতাম জীবন ধন্য হয়ে যেত। তারপর নিজেকে বোঝালাম সব
জিনিস তোমার জন্য নয়।
বেশ কিছুক্ষণ একটা গেম খেলার পর ঝর্ণা উঠে বসল। আমার মুখের কাছে মুখটা নামিয়ে
নিয়ে এল, আমি ওর গরম নিঃশ্বাসের স্পর্শ পেলাম। ভীষণ ইচ্ছে করছিল ওর মাথাটা ধরে ঠোঁটে
ঠোঁট ঠেঁকাই, পারলাম না। নিজেকে পুরুষ বলে পরিচয় দিতে সেই মুহূর্তে আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল।
ঝর্ণা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে লাইটটা অফ করে দিল। কুপের ভেতর হাল্কা সবুজ কালারের ছোট
লাইটটা জ্বলছে। ঝর্ণা নিজের গেঞ্জিটা খুলে ফেলল। আমি অবাক হয়ে ওর বুকের আপেল
বাগানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঝর্ণা তো ব্রা পড়ে নি, তাহলে? আমার ভুল ভাঙল, না ঝর্ণা ব্রাটাই খুলছে। ও ট্রান্সপারেন্ট ব্রা পড়েছে। ব্রাটা নীচু হয়ে ওর
ব্যাগে ঢোকাল। কালো চুলরাশি ওর পিঠময় ছড়িয়ে পড়েছে। ওর শরৎকালের মত ফর্সা পিঠে
কাল চুলের রাশি ছড়িয়ে পড়েছে। আমার দিকে ফিরে তাকাল। ওর নিরাবরণ দেহে আমার চোখ পড়ল। ওর নাভিমূল কি মসৃন, আর কি গভীর। গোল নাভীটা আমায় যেন ডাকছে,
- মুকুল ওঠ, আর দেরি কর না, সময় নষ্ট কর না, মানুষের জীবনে সুযোগ বার
বার আসে না। এই অপ্সরা তোমার জন্যই আজ সব কিছু সাজিয়ে নিয়ে বসে আছে আর তুমি ঘুমোচ্ছ ভীরু, কাপুরুষ।
ঝর্ণা গেঞ্জিটা মাথা গলিয়ে পড়ল। ওর বগলে এক ফোঁটা চুল নেই। কামানো বগলে
শঙ্খের মত দু’চারটে ভাঁজ পড়েছে। সত্যিই ঝর্ণাকে অপ্সরার মত লাগছে। ঝর্ণা ওর বার্থে বাবু
হয়ে বসল। আমার দিকে এরবার তাকাল আমি জেগে আছি কি না। আর এবার উঠে এসে আমার মুখের কাছে
মুখটা নামিয়ে নিয়ে এল। ওর নিঃশ্বাস এখন আরও ঘন হয়ে পড়ছে। আমি ইচ্ছে করেই জিভটা বার করে আমার ঠোঁটটা চাটলাম, ঝর্ণা আস্তে মুখটা সরিয়ে নিল। আমি একটু নড়েচড়ে একটা বড়ো নিঃশ্বাস ফেললাম, ঝর্ণা ওর সিটে গিয়ে বসল। আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ও বসে রইল। তারপর
আস্তে আস্তে আমার দিকে একপাশ হয়ে শুল। ল্যাপটপটা কাছে টেনে নিল। একবার আমার দিকে
তাকাছে আর একবার ল্যাপটপের দিকে। বেশ
কিছুক্ষণ এরকম করার পর ও একটা ফাইলে গিয়ে রাইট ক্লিক করে ওপেন উইথ করে একটা ফিল্ম চালাল। ল্যাপটপটা ওর দিকে একটু ঘুরিয়ে নিল। আমি ল্যাপটপের স্ক্রিনটা
পুরোটা দেখতে পাচ্ছি না, তবে কিছুটা দেখতে পাচ্ছি।
মনে হল ও যেন একটা ব্লু-ফিল্ম দেখছে, আমি আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছি। ঝর্ণা এবার সিটের ওপর উঠে বসল। আবার ল্যাপটপটা
ঘুরিয়ে নিল। হ্যাঁ আমি যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। একটা টিন এজের বিদেশি ব্লু-ফিল্ম, আমি এবার পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। নিজেকে সত্যিই মনে হল কাপুরুষ। একবার ভাবলাম
উঠে বসে ওকে কাছে টেনে নিই। তারপর ভাবলাম না থাক।
চোখ মিট মিট করে ছবি দেখতে দেখতে আমার নুনু বাবাজীবন খাঁড়া হতে শুরু করেছে।
ঝর্ণাও একটা হাতে ওর নিজের মাঁই টিপছে আর একটা হাত প্যান্টের মধ্যে চালিয়ে দিয়েছে। আমার সোনামনিও তখন রাগে ফুঁসছে, পাঞ্জাবীর ওপর দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে বসে আছে। হঠাৎ ঝর্ণা আমার দিকে তাকাল। ওর
চোখ পড়ল আমার মধ্যপ্রদেশে। আমার সোনামনি তখন শক্ত খাঁড়া হয়ে মাথা উঁচু করে
দাঁড়িয়ে। ও পায়ে পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এল। আমার মুখের দিকে একবার তাকাল, সত্যি আমি ঘুমিয়ে আছি কি না। ডান হাতটা আমার সোনামনির কাছে নিয়ে গিয়েও
সরিয়ে নিল। মনে মনে ভাবলাম ইস, যদি হাত
দিত। দু’তিনবার এরকম করার পর ঝর্ণা আমার সোনামনিকে স্পর্শ করল।
আঃ কি আরাম, ওর কোমল হাতের স্পর্শে আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম।
স্বপ্না বহুবার আমার ওখানে হাত দিয়েছে কিন্তু সেই স্পর্শের সঙ্গে এই স্পর্শের
আকাশ পাতাল ফারাক। ঝর্ণা আমার মুখের দিকে একবার তাকাল। আস্তে আস্তে আমার
পাঞ্জাবীটা ওপরের দিকে তুলে পাজামার দরিতে হাত দিল। ঐ দিকে ল্যাপটপে ব্লু-ফ্লিমের
সেই ছেলেটি মেয়েটিকে চিৎ করে ফেলে
ফচাৎ ফচাৎ করে চুদে চলেছে, যেন মেসিন চলছে। মেয়েটি
কখনও ঠোঁট কামরে ধরছে কখনও জিভ চুষছে, কখনও আঃ উঃ শিৎকার দিয়ে উঠছে। ঝর্ণা একবার
আমার মুখের দিকে তাকায় আর একবার আমার পাজামার
দরির দিকে। আস্তে আস্তে আমার পাজামার দরিটা খুলে ফেলে। পাজামাটা একটু নিচে নামাতেই
আমার সোনামনি ওর সামনে লাফিয়ে চলে এল।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন